রাসুল সাঃ এর জীবনী
আমাদের এই ব্লগ টি রাসুল সাঃ এর জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হবে যদি কোন ভুল ক্রটি থাকে ধরিয়ে দিবেন।
রাসুল সাঃ এর জীবনী
রাসুল সাঃ এর বিবাহ
খাদিজা (রাঃ)
মক্কাবাসীর
কাছে 'তাহিরা' বা 'পবিত্র' নামে খ্যাত খাদিজা
(রাঃ) হস্তী বর্ষের ১৫ বছর আগে অর্থাৎ নবীর
জন্মেরও ১৫ বছর আগে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খুওয়াইলিদ ইবন আসাদ এবং মাতা
ফাতিমা বিনতু জায়িদ। পিতার বংশের ঊর্ধ্ব পুরুষ কুসাঈ-এর মাধ্যমে মুহাম্মদের বংশের
সাথে তার বংশ মিলিত হয়েছে । এজন্যই নবুওয়ত লাভের পর খাদিজা
নবীকে তার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবন নাওফিলের কাছে নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, "আপনার ভাতিজার কথা শুনুন"। ধারণা করা হয় বংশগত
সম্পর্কের ভিত্তিতেই তিনি একথা বলেছিলেন। তার পিতা খুওয়াইলিদ ইবন আসাদ ফিজার যুদ্ধে
নিজের গোত্রের সেনাপতি ছিলেন। তার অনেক সন্তান ছিল। সন্তানদের মধ্যে খাদিজা ছিলেন দ্বিতীয়। ইসলাম আবির্ভাবের আগে তিনি ইব্রাহিম
(আঃ)-র ধর্মে বিশ্বাস করতেন। তৎকালীন সমাজে সৎকর্ম ও দানশীলতার ক্ষেত্রে হযরত
খাদিজার সমকক্ষ কেউ ছিলেন না। তিনি ছিলেন হিজাজের অন্যতম বড় ব্যবসায়ী।
রাসুল (সাঃ) এর সাথে পরিচয়ঃ
খাদিজা অন্যান্য
কুরাইশদের মত একজন বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক সম্পদশালী এবং সম্মানিত। তিনি
ব্যবসার জন্য সৎ ও যোগ্য লোকবল নিয়োগ দিতেন। সেই সময় মক্কায় সততা এবং আমানতদারীতার
জন্য মুহাম্মদ বিখ্যাত হয়ে উঠেন। তিনি তার চাচা আবু তালিবের ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন
এবং অনেক ব্যবসায়ীক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। খাদিজা তার গুণের কথা জানতে পেরে
তাকে নিজের নিয়োগপ্রদান করেন। মুহম্মাদকে তার বিশ্বস্ত দাসী মায়সারার সাথে ব্যবসার
জন্য সিরিয়ায় প্রেরণ করেন। সিরিয়ায় ব্যবসা করে মুহাম্মাদ অনেক মুনাফা অর্জন করেন
এবং ব্যবসার প্রতিটি হিসাব খাদিজাকে বুঝিয়ে দেন। এতে খাদিজা অনেক খুশি হন। এছাড়া
খাদিজা তার ছোট ভাইয়ের বউ সাফিয়ার কাছ থেকে মুহাম্মদ সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনেছিলেন।
রাসুল (সাঃ) এর সাথে বিবাহঃ
খাদিজার বান্ধবী ইয়ালার স্ত্রী নাফিসা
বিনতে মানিয়া বিবাহের ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছেন। তিনি খাদিজার হয়ে মুহাম্মদ (সাঃ)
এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান। এরপর দুই পক্ষের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়।
তাদের বিয়েতে
আবু তালিব, হামযাহসহ অনেক বিশিষ্ট কুরাইশ ব্যক্তিবর্গ
উপস্থিত ছিলেন। সকলের সামনে বিয়ের খুৎবা প্রদান করেন আবু তালিব। আরবী গদ্যসাহিত্যে
এই খুৎবা এখনো বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বিয়ের মোহরানা ছিলো ৫০০ স্বর্ন মুদ্রা।
খাদিজা নিজেই দুই পক্ষের খরচাদি বহন করেন। তিনি দুই উকিয়া সোনা ও রুপা মুহাম্মদ (সাঃ)
কে দেন ,
যেন তা দিয়ে উভয়ের পোশাক ও ওয়ালীমার (বৌভাত অনুষ্ঠান) আয়োজন
করতে পারেন। বিয়ের সময় খাদিজার বয়স ছিলো ৪০ বছত এবং মুহাম্মদ (সাঃ) এর বয়স ছিলো
২৫ বছর। মুলত মুহাম্মদ (সাঃ) এর চারিত্রিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে খাদিজা তাকে বিয়ে
করেন। খাদিজা (রাঃ) -র বিয়েকে তৎকালীন সমাজ স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। তৎকালীন অন্ধকার
যুগে সামাজিক সম্পর্কের মাপকাঠি ছিল অর্থ-সম্পদ। এ কারণেই খাদিজা (রাঃ) সম্পদহীন
রাসূল (সাঃ)-কে বিয়ে করায় অনেকেই তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে। কুরাইশ বংশের এক দল
অহংকারী ও নিন্দুক মহিলা খাদিজা (রাঃ) কটাক্ষ করে বলতো, তোমার এতো আভিজাত্য ও সম্পদের অধিকারী হবার পরও কেন দরিদ্র এক
যুবককে বিয়ে করলে? খাদিজা (রাঃ) এর জবাবে বলেছিলেন,
"এই সমাজে মুহাম্মদ (সাঃ)-র মতো আর কেউ কি আছে? তার মতো সচ্চরিত্রবান ও মর্যাদাবান দ্বিতীয় কোন ব্যক্তিকে কি তোমরা চেন?
আমি তার সৎ গুণাবলীর কারণেতাকে বিয়ে করেছি।" কিন্তু সেই সমাজের
গোড়া ও মুর্খ মানুষের কাছে বিবি খাদিজার যুক্তি বোধগম্য ছিলো না। এ কারণে হিজাজের
জেদি মহিলারা হযরত খাদিজার (রাঃ) সাথে শত্রুর মতো আচরণ করেছে। হযরত মুহাম্মদ
(সাঃ)-র নবুয়্যত প্রাপ্তির পর ঐসব মহিলার বিদ্বেষ আরও বেড়ে যায় এবং এই বিদ্বেষের
মাত্রা এত বেশি ছিল যে, খাদিজা (রাঃ) -কে তারা তার সন্তান
প্রসবের সময় বিন্দু পরিমাণ সহযোগিতাও করেনি। সবমিলিয়ে হযরত খাদিজা (রাঃ) ঐ সমাজে
একা হয়ে পড়েছিলেন। তৎকালীন সমাজের নারীরা তাকে সহযোগিতা না করলেও আল্লাহ তার
সহযোগিতায় পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানিত মহিলাদেরকে পাঠিয়েছিলেন। বিপুল সম্পদের মালিক
এবং সমাজে ব্যাপক প্রভাবশালী হবার পরও রাসূলের সাথে খাদিজা (রাঃ) -র ব্যবহার ছিল
অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ। তার আচার-ব্যবহারে অহমিকার লেশ মাত্র ছিল না।
বিবাহের পরোক্ষ ফলাফলঃ
নবুয়্যত
লাভের আগে রাসূল (সাঃ) প্রতিমাসে কয়েক বার করে নূর পাহাড়ের চূড়ায় হেরা গুহায়
যেতেন। আর মহিয়সী নারী বিবি খাদিজা হাসি মুখে রাসূলকে বিদায় জানাতেন। হযরত আলী
(আঃ)-কে দিয়ে তিনি গুহায় নিয়মিত খাবার পাঠাতেন। কখনো কখনো তিনি নিজেও আলী (আঃ)-র
সাথে হেরা গুহায় যেতেন। নবুয়্যত লাভের পর রাসূলের অনেক আত্মীয়-স্বজন তাকে
প্রত্যাখ্যান করলেও বিবি খাদিজা, রাসূল
(সাঃ)-কে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছেন। হযরত খাদিজা (রাঃ) বিনা বাক্যে ইসলাম গ্রহণ
করেন। তিনি শুধু মুখে ঈমান আনেননি সমগ্র অস্তিত্ব দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার কাজে
নিয়োজিত হন। তিনি ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার সকল সম্পদ রাসূলকে উপহার
দিয়েছিলেন। শোয়াবে আবু তালিব নামক উপত্যকায় মুসলমানরা যখন বিচ্ছিন্ন ও অবরোধের
শিকার হয়েছিল, তখন বিবি খাদিজার আর্থিক সহযোগিতা মুসলমানদের
টিকে থাকতে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে। অর্থনৈতিক সংকট দূর হবার পরও হযরত খাদিজার
সহযোগিতা মুসলমানদের পথ চলতে সহযোগিতা করেছে। খাদিজা (রাঃ) ছিলেন অত্যন্ত ধৈয্যশীল
ও সহিষ্ণু। মানব মুক্তির দূত সর্বশেষ নবী রাসূল (সাঃ)-র প্রতি তার পূর্ণ আস্থা ও
বিশ্বাস ছিল। এ কারণে নবুয়্যত প্রাপ্তির আগে ও পরে রাসূলের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে
তিনি সর্বদায় সচেষ্ট ছিলেন। কোন কারণে রাসূল (সাঃ)-র মন খারাপ থাকলে তিনি
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিতেন। রাসূলের সকল কাজে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।
বলতে গেলে হযরত খাদিজা ছিলেন, রাসূলের এক যোগ্য উপদেষ্টা।
ইসলাম ধর্মে খাদিজা (রাঃ) মর্যাদাঃ
ইসলাম ধর্মে
খাদিজার মর্যাদা অন্যান্য মহিলাদের চেয়ে অনেক উপরে। তিনি প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী
ব্যক্তি। মুহাম্মদের সাথে প্রথম নামায তিনিই পড়েছিলেন। ইসলাম ধর্ম অনুয়ায়ী বর্ণিত
আছে যে,
ফেরেশতা জিবরাইল মুহাম্মদকে বলেন, "আপনি তাকে (খাদিজা) আল্লাহ ও আমার পক্ষ থেকে দেওয়া সালাম পৌঁছিয়ে
দিন।"বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে বলা হয়েছে, "পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহিলা হলো মরিয়ম বিনতে ইমরান ও খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ।"
আরো বলা হয়েছে, " জান্নাতে তাঁকে মণি-মুক্তার তৈরী
একটি প্রাসাদের সুসংবাদ দিন।"খাদিজা সম্পর্কে মুহাম্মদ বলেন, "মানুষ যখন আমাকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছে, তখন সে আমাকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে। সবাই যখন কাফির (অবিশ্বাসী)
ছিলো,
তখন সে ছিলো মুসলিম। কেউ যখন আমার সাহায্যে এগিয়ে আসে নি, তখন সে আমাকে সাহায্য করেছে।"
আগের পর্বঃ
https://rasulsmerjiboni.blogspot.com/2020/01/httpsrasulsmerjiboni.html
রাসুল (সাঃ) এর পুর্নাংগ জীবনী জানতে আমাদের এই অ্যাপ্টি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করুন।https://play.google.com/store/apps/details?id=com.duappsmedia.mohanobi
Comments
Post a Comment