রাসুল সাঃ এর জীবনী


আমাদের এই ব্লগ টি রাসুল সাঃ এর জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হবে যদি কোন ভুল ক্রটি থাকে ধরিয়ে দিবেন। 
             রাসুল সাঃ এর জীবনী
রাসুল (সাঃ) এর শৈশব কাল
          আকিকা ও নামকরন
জন্মের সাতদিন পর আব্দুল মুত্তালিব আরবের চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী আত্নীয় স্বজনকে আকিকার দাওয়াত দেন।খাওয়া দাওয়া শেষে কুরাইশ নেতৃবর্গ আবদুল মুত্তালিব কে শিশুর নাম জিজ্ঞাসা করলে ,তিনি খুশিতে বলেন মুহাম্মাদ অর্থাৎ “প্রশংসিত”।
তখন সমবেত জনতা বললেনঃ আপনি কেন স্বজাতির নাম রেখে এরকম অদ্ভুত নাম রেখেছেন? আব্দুল মুত্তালিব বলল আমি চাই আমার এ সন্তান যুগে যুগে প্রশংসিত হয়,তাই আমি এই নাম রেখেছি।
মা আমেনা গর্ভাস্থায় যে স্বপ্ন দেখলেন সে অনুযায়ী নাম রাখলেন আহমদ অর্থাৎ পরম প্রশংসাকারী ,আহমদ ও মুহাম্মাদ দুই নামে তিনি পরিচিত লাভ করেন।

হযরত হালিমা রাঃ এর গৃহে রাসুল (সাঃ)
রাসুল সাঃ জন্মের পর কয়েকদিন  মা আমিনা তাকে দুধ পান করান। পরে আবু লাহাবের দাসী তাকে দুগ্ধ পান করান।দুই সপ্তাহ পর মরুভুমি থেকে ধাত্রীরা আসেন ,একে একে সবাইকে ধাত্রিরা গ্রহন করলে ও শিশু মুহাম্মাদ সাঃ কে নিতে কেউ রাজী হয়না কারণ এতিম সন্তান থেকে কেউ উপকার লাভ করবেনা এই ভয়ে সর্বশেষ হযরত হালিমা রাঃ শিশু মুহাম্মাদ সাঃ কে নিতে রাজী হন।

তত্কালীন আরবের রীতি ছিল যে তারা মরুভূমির মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠার মাধ্যমে সন্তানদের সুস্থ দেহ এবং সুঠাম গড়ন তৈরির জন্য জন্মের পরপরই দুধ পান করানোর কাজে নিয়োজিত বেদুইন মহিলাদের কাছে দিয়ে দিতেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর আবার ফেরত নিতেন। এর আরেকটি কারণ ছিল বিশুদ্ধ আরবি ভাষা শিক্ষা করা। এই রীতি অনুসারে মোহাম্মদকেও  হালিমা বিনতে আবু জুয়াইবের (অপর নাম হালিমা সাদিয়া) হাতে দিয়ে দেয়া হয়। এই নারী ছিলেন বনু সা'দ ইবনে বকর গোত্রের (হাওয়াযেন গোত্র) অন্তর্ভুক্ত। তার স্বামীর নাম ছিলো হারেস ইবনে আবদুল ওযযা আর ডাক নাম আবু কাবশা, যিনি একই গোত্রের লোক ছিলেন। মুহাম্মাদের নবুয়্যত লাভের পর তিনি মক্কায় এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। হালিমার এক পু্ত্র এবং তিন কন্যা ছিল। পুত্রের নাম ছিল আবদুল্লাহআর কন্যা তিনজনের নাম ছিল যথাক্রমে আনিসা, হোযায়ফা এবং শায়মাএদের মাঝে আবদুল্লাহ্ এবং শায়মার ইসলাম গ্রহণের কথা জানা যায়। বাকীদের ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি অজ্ঞাত। এছাড়া হালিমা নবীর বড় চাচা হারিসের পুত্র আবু সুফয়ানকেও দুধ পান করিয়েছেন। তাই হালিমার সূত্রে আবু সুফিয়ান ইবনে হারেস ইবনে আবদুল মোত্তালেবও (যে সম্পর্কে নবীর চাচাতো ভাই ছিলো) নবীর দুধ ভাই ছিল

শিশু নবী (সাঃ)
দুই বছর পর্যন্ত শিশু নবী (সাঃ) কে মা হালিমা (রাঃ) দুধ পান করান।ছোটবেলা থেকে শিশুনবী (সাঃ) অপারপার শিশুর চেয়ে আলাদা ছিল।তার মলমূত্র ত্যাগের সময় ছিল নির্দিষ্ট। ময়লা আবর্জনা তাকে স্পর্শ করত না।সব সময় ডানপাশ থেকে দুধ পান করতেন। কারন তার দুধ ভাই আবদুল্লাহ বাম পাশের দুধ পান করতেন।কখনো তিনি বাম পাশের দুধ পান করতেন না।এমন কোন প্রমান পাওয়া যায়না।

বাড়ন্ত বয়স
শৈশবে রাসুল সাঃ ছিলেন অন্যান্য শিশুদের থেকে আলাদা।তার শরীরের গঠন অপারপার শিশু থেকে দ্রুত বৃদ্বি পেত । অন্য শিশুরা যেখানে একবছরে যে পরিমান বৃদ্বি পেত তা রাসুল সাঃ একমাসে বৃদ্বি পেত।দুধ পানের দুই বছরে প্রথা অনুযায়ী মা হালিমা শিশু মুহাম্মাদ সাঃ কে মা আমেনার নিকট নিয়ে আসেন।শিশুর এরকম সুস্বাস্থ্য দেখে মা আমিনা খুশি হন।কিন্তু তখন মক্কায় মহামারির প্রদুর্ভাব দেখা দিলে মা আমেনা তাকে আরো কিছুদিন তার নিকট রাখতে বলে।এতে রাসুল সাঃ আরো কিছুদিন মা আমেনার কাছে থাকেন।
মেষ চড়ানোঃ
রাসুল সাঃ একদিন তার দুধমাতাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার ভাই আবদুল্লাহ ও অন্য সংগীরা সারাদিন কোথায় থাকে ?হালিমা বলল “তারা মাঠে মেষ চড়াতে যায়” তখন রাসুল (সাঃ) বললেন আমিও তাদের সাথে মাথে মেষ চড়াতে যাব।মা হালিমা বারবার নিষেধ করলেও ,রাসুল (সাঃ) বারবার বলায় রাজি হলেন।
   মেষ চড়ানোর কারণঃ
           “রাসুল্লাহ (সঃ) এর প্রথম জীবিকা ছিল মেষ চালনা,এবং রাসুল্লাহ (সঃ) বলতেন “আল্লাহ এমন কোন নবীকে পাঠাননি যিনি মেষ চালাতেন না।” তখন সাহাবীরা তাকে জিজ্ঞেস করল “আর আপনি?”তিনি উত্তর দেন “হ্যাঁ,মক্কার মানুষের দেয়া ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে আমি মেষ চড়াতাম।”প্রত্যেক নবীই মেষপালক ছিলেন। আর এর দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে আল্লাহ তাঁর প্রত্যেক আম্বিয়াদের কাজের মাধ্যমে শিক্ষাদান করেন।আম্বিয়াগণ মেষ চড়িয়ে কি শিক্ষা পেলেন?

১। সবচেয়ে উপযুক্ত শিক্ষা ছিল দায়িত্ববোধের।রাসুল্লুলাহ(সঃ) বলেন,"তোমরা সবাই আর তোমরা সবাই তোমাদের ভেড়ার পালের প্রতি দায়বদ্ধ।" যেমন ইমাম মুসল্লিদের জন্য,কর্তা তার ঘরের জন্য ইত্যাদি। সবাই কিছু না কিছুর জন্য নতুবা অন্য কারো জন্য দায়ী।
রাখাল সাধারণত অন্য কারো জন্য কাজ করে,যে পালের মালিক। অর্থাৎ তাদের কেউ ভাড়া করে,তাই তারা অন্য কারো কাছে দায়বদ্ধ । তাই রাখাল মালিকের কাছে গিয়ে বলতে পারে না "আমি দুঃখিত তোমার একটি ভেড়া খোয়া গিয়েছে।"এটা জরুরি নয় ভেড়া কি করেছে,রাখালকেই জবাবদিহি করতে হবে তা তার ভুল না হলেও। ভেড়া না মানলেও রাখালই দায়ী।
এটা নেতাদের জন্যএকটি বড় শিক্ষা। আপনারা আপনাদের পালের জন্য দায়ী। আল্লাহর আম্বিয়াদেরও তাদের গোত্রের জন্য জবাব দিতে হবে একদিন।

২। এটা ছিল ধৈর্যের শিক্ষা। ভেড়াকে ঘাস খাওয়ানো সময় সাপেক্ষ কাজ,ভেড়া তার নিজস্ব সময় নেয়,তারা ধীর,তাই রাখালকে সহিষ্ণু হতে হয়
কখনও ভেড়া একে অন্যের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয়,কিংবা খেলাধুলাও করতে পারে,রাখালকে ধৈর্য ধরতে হয়। একজন রাখাল তাদের বলতে পারে না "আমাদের দেরী হয়ে গেল" অথবা এমন কিছু,ভেড়া তার নিজ সময় নিবেই। রাখাল সাধারণত সকালে যায় আর ফেরে সূর্যাস্তের সময়।

অর্থাৎ আম্বিয়াগণ লোকদের সাথে সহিষ্ণু হবার শিক্ষা পেতেন। দেখুন মুসা(আঃ )কে কি করতে হয়েছিল। যা ছিল অবহনযোগ্য,কিন্তু মুসা যে কোন নবীর চেয়ে বেশি সময় ধরে রাখাল ছিলেন,তিনি দশ বছর ধরে এ কাজ করেছেন। যখন তিনি মিসর ছেড়ে চলে যান এবং বিয়ে করেন, সুয়াইব তাকে বলে তার জন্য ৮-১০ বছর কাজ করতে। কুরআনের আয়াত বলে না যে তিনি ৮-১০ বছর কাজ করেছেন কিনা,কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জানতে চাইলেন। তাই তিনি জিবরাঈলকে জিজ্ঞেস করলেন মুসা(আঃ) কত দিন কাজ করেছেন। তিনি (জিবরাঈল) বললেন, "মুসা (আঃ) সম্পূর্ণ সময় কাজ করেছেন" অন্য ভাষায় ১০ বছর।নুহ(আঃ) ৯৫০ বছর দাওয়ার কাজ করেছেন আর তিনি তার লোকদের প্রতি সহিষ্ণু ছিলেন। তিনি সব উপায়ে চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, "আমি গোপনে এবং জনসম্মুখে চেষ্টা করেছি। আমি রাত দিন চেষ্টা করেছি। আমি সব উপায়ে চেষ্টা করলাম তবুও তারা আমাকে অস্বীকার করল।"
৩। নিরাপত্তাঃ রাখাল ভেড়ার পালের নিরাপত্তা দেয়। নেকড়ে সহ বিভিন্ন প্রাণী আর রোগ-বালাই থেকে। রাখাল এটা নিশ্চিত করে যে তার পালের উপর কোন বিপদ যেন না আসে। আল্লাহর আম্বিয়াগণ তাদের লোকদের নিরাপত্তা দিতেন। তাঁরা তাদেরকে দৈহিক আর মানসিক বিপদ থেকে রক্ষা করতেন। একবার মদিনায় গোলমালের আওয়াজ পাওয়া গেল । কিছু সাহাবী তাদের অস্ত্র আর ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। কিন্তু পথের মাঝে তাঁরা বিস্মিত হয়ে দেখলেন রাসুল্লুল্লাহ(সাঃ) ফিরে আসছেন আর তাঁদের বলছেন সব ঠিক আছে। যদিও সাহাবিরা খুব তাড়াতাড়ি করেছিলেন তথাপি রাসুলুল্লাহ(সাঃ) তাঁদের আগে উপস্থিত হয়েছিলেনরাসুলুলাহ(সঃ)আমাদের সকল বিপদের জন্য সতর্ক করেছেন। তিনি পরে কি হবে তাও বলে গিয়েছেন । যেমন,দাজ্জাল”
বক্ষবিদারণঃ
বক্ষবিদারণ শব্দটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চিন্তা চলে যায় দেড় হাজার বছর আগে ইতিহাসের একটি বাঁকে। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আরব ভূমিতে জন্ম নিয়েছিলেন সৃষ্টির সেরা, আল্লাহর পেয়ারা, সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। বক্ষবিদারণকে আরবিতে বলা হয় ‘শাক্কুস সাদর’, ফার্সি ও উর্দুতে ‘সিনা চাক’। চাক মানে চিরা। ছুরি দিয়ে কোনো জিনিস চেরা হয় বিধায় ফার্সি ও উর্দুতে বলা হয় চাকু। নবীজির জীবনে বক্ষবিদারণের ঘটনা ঘটেছিল একবার নয়, দুই বা তিনবার। প্রথমবার তার বুক চেরা হয়েছিল শৈশবে চার বছর বয়সে। দ্বিতীয়বার হেরা পর্বতের উপরিস্থ গুহায় ধ্যানমগ্নতায় আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি লাভের সূচনা পর্বে। তৃতীয়বার বক্ষবিদারণ হয়েছিল মেরাজ উপলক্ষে ঊর্ধ্বজগৎ পরিভ্রমণের প্রস্তুতি পর্বে। তখন হজরতের বয়স ৫০ বছরের বেশি।
আধুনিক বিজ্ঞান ও বক্ষবিদারণঃ
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ওপেন হার্ট সার্জারির প্রসার ঘটায় ‘শাক্কুস সাদর’-এর ব্যাপারটি বোঝা সহজ হয়েছে। তবে নবীজি (সা.) এর বেলায় ব্যাপারটি ছিল অলৌকিক। এর পেছনে আয়োজন ছিল অতি-প্রাকৃতিক। সার্জন ছিলেন আল্লাহর ফেরেশতা। অপারেশনের আগে চেতনা বিলোপের ওষুধ প্রয়োগের প্রয়োজন হয়নি। ফলে ঘটনার আদ্যোপান্ত হজরতের গোচরেই সম্পন্ন হয়েছে এবং তিনি একটুও অচেতন হননি। আবার অপরেশন-উত্তর তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ সুস্থ, আগের চেয়ে প্রাণবন্ত। হজরতের বক্ষ বিদারণের কারণ নিয়ে গবেষকরা অনেক কথা বলেছেন। মূল কথাটি হলো, হজরতের মানবীয় সত্তায় মন্দ ও দুর্বল কোনো কোষ থাকলে, তা অপসারণ করে নবুয়াতের দায়িত্ব পালন বা সাত আসমান পাড়ি দিয়ে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ অতিক্রম করে আল্লাহর সান্নিধ্যে উপনীত হওয়ার রুহানি শক্তি ও মনোবল ভরে দেয়া। আমরা প্রথমে হজরতের শৈশবের বক্ষ বিদারণের ঘটনার ওপর আলোকপাত করব। নবীজি (সা.) জন্মেছিলেন মক্কা নগরীতে কোরাইশ বংশে। অভিজাত কোরাইশ বংশের অতি সম্মানিত গোত্র হাশেমি শাখার প্রবাদপ্রতিম পুরুষ আবদুল মুত্তালিব তখনও জীবিত। তার দশম পুত্র হজরত আবদুল্লাহর ঘরে মা আমেনার কোলে জন্মেছিলেন সৃষ্টির সেরা সুন্দর ফুল মুহাম্মদ রাসূল (সা.)। আরব ঐতিহ্যের নিয়মমাফিক প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠার জন্য শিশু মুহাম্মদকে তুলে দেয়া হয় পেশাদার ধাত্রী হালিমার কাছে। শিশু মুহাম্মদের আগমনে সচ্ছলতার আনন্দে আলোকিত হয় হালিমার জীর্ণ কুঠির। প্রকৃতির কোলে অন্য সঙ্গীদের সঙ্গে বেড়ে উঠলেও মুহাম্মদের চলন-বলনের ধরন ছিল আলাদা। তাই মা হালিমা ও তার স্বামী ‘হারেস’-এর সমগ্র মনোযোগ নিবদ্ধ ছিল কোরাইশি এ শিশুটির প্রতি। প্রাত্যহিক নিয়মে মুহাম্মদ অন্য ভাইদের সঙ্গে একদিন মেষ চরাতে গেছেন অদূরে চারণ ভূমিতে। হঠাৎ সঙ্গীরা লক্ষ্য করে শ্বেত-বসন দু’জন লোক ধরে নিয়ে গেছে কোরাইশি ভাইটিকে। দৌড়ে ঘরে এসে খবর দেয় তারা মা হালিমা ও তার স্বামীকে। প্রাণটা হাতের মুঠোয় নিয়ে দৌড় দেয় দু’জনে মুহাম্মদের সন্ধানে। দেখে সুবোধ ছেলেটির চেহারা বিবর্ণ। মুসলিম শরিফের রেওয়াতটি এখানে প্রণিধানযোগ্য
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে (নবুয়াতের আগে ফেরেশতা) জিবরাঈল আগমন করেন, তখন তিনি ছেলেদের সঙ্গে খেলছিলেন। ফেরেশতা তাকে ধরে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে তার হৃৎপি-টি বের করেন। তা থেকে একটি রক্তপি- বের করে নেন। ফেরেশতা বলেন, এ হচ্ছে তোমার ভেতরকার শয়তানের অংশ। অতঃপর হৃৎপি-টি সোনার তশতরিতে নিয়ে জমজম এর পানি দিয়ে ধৌত করেন। তারপর জোড়া লাগিয়ে আগের জায়গায় প্রতিস্থাপন করেন। এ দৃশ্য দেখে ছেলেরা দৌড়ে ধাত্রীমা হালিমার কাছে এসে বলে, মুহাম্মদকে হত্যা করা হয়েছে। তারা দ্রুত গিয়ে দেখে, তার চেহারার রঙ বিবর্ণ। বর্ণনাকারী আনাস বলেন, হজরতের বক্ষে পরবর্তী সময়েও সেলাইয়ের চিহ্ন দেখা যেত। (মুসলিম, ২৪০/১৬৪)। অন্যান্য সূত্রের বর্ণনায় ফেরেশতার সংখ্যা ছিল দু’জন আর তার হৃদপি- ধোয়া হয়েছিল বরফ দিয়ে। এ অপারেশনের বিবরণ দিয়েছেন স্বয়ং রাসূলে আকরাম (সা.)। এ ঘটনায় বিচলিত হয়ে পড়ে হালিমা দম্পতি। আতঙ্কিত হয়, না জানি কোনো জিন-ভূতের আসর হয়েছে কিনা। কিন্তু প্রাণোচ্ছল শিশু মুহাম্মদকে দেখে আঁচ করা যায় না এর কোনো আলামত। দ্বিধা থরথর হালিমা সিদ্ধান্ত নেন, কোনো দৈব দুর্ঘটনার আগে শিশু মুহাম্মদকে ফিরিয়ে দিতে হবে মক্কায়।

মা আমেনার ইন্তিকালঃ

বক্ষবিদারণ বা সিনা চাকের ঘটনার পর বিবি হালিমা ভীত হয়ে পড়লেন। তিনি শিশুকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এলেন। ছয় বচর বয়স পর্যন্ত তিনি মায়ের স্নেহ ছায়ায় কাটালেন।
হযরত আমেনার ইচ্ছে হলো যে, তিনি পরলোকগত স্বামীর কবর যেয়ারত করবেন। পুত্র মোহাম্মদ, দাসী উম্মে আয়মন এবং শশুর মোত্তালেবকে সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রায় পাঁচ শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মদিনায় পৌঁছলেন। একমাস সেখানে অবস্থানের পর মক্কার পথে রওয়ানা হলেন। মক্কা ও মদিনার মাঝামাঝি আবওয়া নামক জায়গায় এসে বিবি আমেনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ক্রমে এই অসুখ বেড়ে চললো। অবশেষে তিনি আবওয়ায় ইন্তেকাল করেন।

দাদা আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুঃ
হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিব সে যুগে মক্কার একজন
অতি প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন । বিরাট পরিবার তাঁর । সকলের ব্যয়ভার বহন সহজ-সাধ্য নয় । তবুও তিনি এই এতিম বালককে প্রান দিয়েই ভালবাসতেন
অতীব সুদর্শন পুত্র আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর তিনি তাঁর ঔরসজাত পুত্রের অনুপম মুখচ্ছবি দেখেই পুত্র হারানোর যন্ত্রণা অনেকখানিই লাঘব করেন । দাদা আবদুল মুত্তালিব এর অনেক সদগুন  রাসুল (সাঃ) এর জীবনকে প্রবাভিত করেছিল। মা আমিনার মৃত্যুর দুই বছর পর ৮২ বছর বয়সে দাদা মৃত্যু বরন করেন।দাদার মৃত্যুতে  রাসুল (সাঃ) অনেক অসাহয় হয়ে পড়েন।
আগের পর্বঃ
https://rasulsmerjiboni.blogspot.com/2020/01/blog-post_10.html
রাসুল (সাঃ) এর পুর্নাংগ জীবনী জানতে আমাদের এই অ্যাপ্টি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করুন। https://play.google.com/store/apps/details?id=com.duappsmedia.mohanobi

Comments

Popular posts from this blog

রাসুল সাঃ এর জীবনী

রাসুল সাঃ এর জীবনী