রাসুল সাঃ এর জীবনী

আমাদের এই ব্লগ টি রাসুল সাঃ এর জীবনী নিয়ে আলোচনা করা হবে যদি কোন ভুল ক্রটি থাকে ধরিয়ে দিবেন।

রাসুল সাঃ এর জীবনী
রাসুল সাঃ এর জন্মের পূর্বে আরবের অবস্থা

 সামাজিক অবস্থাঃ
রাসুল (সাঃ) এর আগমনের পূর্বে আরবের সামাজিক অবস্থা ছিল অত্যান্ত শোচনীয়।বিভিন্ন পাপাচার, ব্যভিচার, অনাচার, দুর্নীতি, কুসংস্কারে সমাজ কুলষিত হয়ে পড়ছিল।গোত্রভিত্তিক সমাজ ব্যাবস্থা আরব জাতিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে রেখেছিল।কিন্তু মরুভাসী বেদুইন এবং শহরবাসী আরবদের জীবন যাত্রা প্রনালি ছিল একই সূত্রে গাথা।কেননা উভয় শ্রেনীর আচার অনুষ্ঠান ও নিয়মনিতী প্রায় একই ছিল।যেমনঃ- মদ-জুয়া,নারিদের প্রতি অত্যাচার ,জীবিত কন্য সন্তানদের কবর দেয়া ছিল প্রচলিত কাজ।তখনকার সমাজে যে বিষয় গুলো ছড়িয়ে পড়ছিল তাহলোঃ
*বংশভিত্তিক সমাজব্যবস্থাঃ
তখনকার আরব বংশভিত্তিক সমাজব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিত।বংশের মর্যাদা তাদের কাছে সবার আগে ছিল।কোন প্রকার সমস্যা হলে বংশের সবাই মিলে সমাধান করতে এগিয়ে আসত।
*আভিজাত্য ও অহংকারঃ
তখনকার নেতৃস্থানীয়  লোকেরা সমাজ কে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে দেয় কেউ নিম্নশ্রেনীর আবার কেউ উচু শ্রেনীর।গরীব অসাহয় লোকদের প্রতি তাদের ছিল চরম ঘৃনা ।অহংকার, আত্নদম্ভিক্তা,পরনিন্দা প্রভুতির কারণে তাদের মধ্যে হিংসা বিদ্বেষ মহামারি আকার ধারণ করেছিল।
*বিয়ে প্রথাঃ
রাসুল (সাঃ) এর জন্মের পূর্বে আরব সমাজে বিয়ে প্রথা ছিল বিপর্যস্ত।পুরূষদের ছিল একাধিক স্ত্রী ও দাসী ,তেমনি নারীদের ছিল একাধিক স্বামী ও দাসী। এমনকি ভাই বোনে বিবাহ ও বিমাতাকে বিয়ে করার মত কুপ্রথা বিদ্যমান ছিল।
*মদ,জুয়া ও নারীঃ
রাসুল (সাঃ) এর জন্মের পূর্বে আরব সমাজ তিনটি বিষয়ের উপর বেশি আসক্ত ছিল তাহলো মদ, জুয়া ও নারী।বিভিন্ন অনুষ্টানে নারীদের সহজলভ্যাতা ছিল যেমন তেমনি মাদকাসক্তি না হলে তারা রাতে ঘুমাতে পারত না।অন্যদিকে জুয়া খেলা ছিল তাদের নিত্যসংগী।অনেকে জুয়া খেলায় সর্বস্ব হয়ে যেত।
*নারীদের করুন পরিনতিঃ
তখনকার সমাজে নারীদের কোন অবস্থান ছিল না বরং তাদেরকে পন্য হিসেবে  হাটে বাজারে বিক্রি করা হত। একজন পুরূষ যত খুশি বিয়ে করতে পারত আবার তালাক দিতে পারত।কন্যা সন্তানদের জীবন্ত কবর দেয়া হত।কোন পুরূষ যদি শুনত যের তার কন্যা সন্তান হয়েছে তাহলে লজ্জায় তার মুখ কালো হয়ে যেত।নারিদের তারা মনে করত আপদ।তাদের কোন  সামাজিক মর্যাদা ছিল না।
*দাসত্ব প্রথাঃ
প্রাচীনকাল থেকে আরবে দাসত্ব প্রথা বিদ্যমান ছিল। শুধু আরবে নয় সমকালিন সারাবিশ্বে  দাসত্ব প্রথা ছিল। দাসদের কে মনিবরা নিজেদের ইচ্ছা মত ব্যাবহার করত।এদেরকে অমানবিক কষ্টে জীবন যাপন করতে হত।এদের ছিল না কোন সামাজিক রাজনৈতিক এমনকি ব্যাক্তিগত ইচ্ছা।এরা ছিল পুতুলের মত।
*সুদ প্রথাঃ
চক্রবৃদ্বি সুদ আরব সমাজ কে ধ্বংস করে দিয়েছিল।সুদের পরিমান এত বেশি ছিল যে, যারা একবার সুদ নিত তারা আর সে সুদ সমেদ অর্থ ফিরিয়ে দিতে পারত না।যার কারনে তারা তাদের বাড়িঘর এমন কি নিজের ছেলে সন্তান ও স্ত্রী সহ নিজেই দাসে পরিনত হত।
*ব্যাভিচারঃ
রাসুল (সাঃ) এর জন্মের পূর্বে আরব সমাজ ব্যাভিচারকে স্বীকৃত দিয়েছিল।অর্থের বিনিময় স্বল্প সময়ে জন্য নারী পুরুষের জৈবিক মিলন করত ।এমনিকি স্বামী তার নিজ স্ত্রিকে গর্ভের সন্তান ধারণ করার জন্য অন্য পুরূষের কাছে পাঠাত।
*নিষ্টুরতাঃ
রাসুল (সাঃ) এর জন্মের পূর্বে আরব সমাজ নিষ্ঠুরতায় ভরপুর ছিল।অভিজাত আরবরা নিছক খেলাচ্ছলে নারীদেরকে ঘোড়ার লেজে সাথে বেধে ঘোড়া ছুটিয়ে দিত। এতে হতভাগা নারীর মৃত্যু হলে তা প্রত্যাক্ষ করে আনন্দ উল্লাস করত।
 রাজনৈতিক অবস্থাঃ
রাসুল (সাঃ) এর জন্মের পূর্বে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল চরম বিশৃঙ্খলা পূর্ন।কোন সংবিধান ও কেন্দ্রিয় শাষনব্যবস্থা না থাকায় রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছিল অরাজকতায় পরিপূর্ন।গোত্রিয় শাষনব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় কেউ কাউকে মানত না। সে কালের শাষনব্যবস্থা যে বিষয় গুলো ফুটে উঠে তাহলোঃ
*গোত্রতান্ত্রিক ব্যবস্থাঃ
আরবিতে গোত্রকে বলা হয় “কাবিলা” ।এই গোত্রগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে বিভক্ত ছিল।এগুলোকে একত্রে বলা হত “কওম”। যেহেতু রাজনৈতক ব্যবস্থায় কোন কেন্দ্রিয় সরকার ছিল না তাই এই গোত্র তান্ত্রিক শাষনব্যবস্থা সর্বত্র বিদ্যমান ছিল।কখনো কখনো কতিপয় গোত্র মিলে একত্রে বাস করার জন্য বিভিন্ন চুক্তি করত।এসব চুক্তিকে বলা হয় “আল আহনাফ” বা মৈত্রি চুক্তি।
* গোত্রিয় নেতা নির্বাচনঃ
গোত্রভিত্তিক শাষনব্যবস্থায় গোত্রিয় নেতা ছিল গোত্রিয় প্রধান।“শেখ” নামে একজন দলপতি থাকত ।যিনি গনতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত হত ।আরবররা শেখের প্রতি চরম আনুগত্য প্রদশর্শন করত।“শেখরা” সাধারণত গোত্রের অন্যান্য ব্যাক্তিদের চেয়ে বয়স, বুদ্বি,সাহস ও অভিজ্ঞতা এগিয়ে থাকত।

* গোত্রিয় কলহ ও যুদ্বঃ
গোত্রভিত্তিক শাষনব্যবস্থা থাকায় এক গোত্র অন্য গোত্রের সাথে যুদ্ব বিগ্রহে লিপ্ত থাকত এমন কি এ যুদ্ব বংশ অনুক্রমে চলত।যেমনঃ বনু তাগলিবের সাথে বনু বকরের যুদ্ব ৪০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।তেমনি মদিনায় আউস খাজরাজ গোত্রের যুদ্ব জংগে বুয়াস নামক এক দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ব চলমান ছিল।

যুদ্বের কারণ খুব সাধারণ ছিল।যেমন গবাদি পশু পালন, পানির নহর ব্যবহার, জীবজন্তুর তৃনলতা  ভক্ষণ ইত্যাদি।

* ব্যাক্তিস্বাধীনতাঃ
আরবরা কখনো ব্যাক্তিস্বাধীনতা খর্ব করা পছন্দ করত না।গোত্রীয় নেতারা শাষন করার পরিবর্তে বেশি সুযোগ দিতেন। যাতে করে প্রত্যেক এর ব্যাক্তিস্বাধীনতা বজায় থাকে।
 প্রশাসনিক অবস্থাঃ
* মক্কার প্রশাসনিক ব্যবস্থাঃ
কুরাইশদের একজন পূর্বপূরুষ “কুসাই” ৪৮০ খ্রিঃ মৃত্যুর সময় নিজ পুত্র আব্দুদ দাড়কে উত্তারিধিকার নির্বাচিত করেন।তিনি মক্কার শাষনব্যবস্থাকে ৫ ভাগে বিভক্ত করেন।
১।হিজাবাঃ যারা কবাঘর আবৃত করবে।
২।সেকায়াঃ যারা যমযম কুপ থেকে হাজীদের পানি বিতরন করবে।
৩।রিফাদাঃ যারা হজ্ব্ব পালন করতে আসা লোকদের সম্ভাসন জানাবে।
৪। নাদওয়াঃ যারা কার্যকারী কমিটির সদস্য পদ লাভ করবে।
৫।লিওয়াঃ যারা পতাকা উত্তোলন করবে।

* দারুন নদওয়াঃ
দারুন নদওয়া ছিল আরবদের মন্ত্রীপরিষদ । এখানে বসে সব কিছুর সিদ্বান্ত নেওয়া হত।এ দারুন নদওয়ায় বসে কুরাইশ দলপতিরা রাসুল (সাঃ) কে হত্যার সিদ্বান্ত নিয়েছিল ,যার প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মক্কা ত্যাগ করে মদিনায় গমন করেন।

 ধর্মীয় অবস্থাঃ
রাসুল (সাঃ) এর জন্মের পূর্বে আরবের ধর্মীয় অবস্থা খুব নাজুক ছিল। তখন মক্কায় ৪ শ্রেনীর ধর্মীয় লোক ছিল। যথাঃ ইহুদি, খ্রিষ্টান,মুর্তিপুজারি,ও হানিফ সম্প্রদায়।

* ইহুদিঃ
বনী ইসরাইলের বংশধদেরকে বলা হয় ইহুদি।এরা মূলত মুসা আঃ এর উম্মত কিন্তু তখনকার যারা ইহুদি ছিল তারা হিমারীয় রাজা আবু কাদির আসাদ এর অনিসারী ছিল। যা রাজা যুনাওয়াস এর সময় এর প্রভাব বৃদ্বি পায়।আরবে বনু নাযির,বনু কুরাইজা, ও বনু কায়নুকা ইহুদি গোত্র বিদ্যমান ছিল।
*খ্রিষ্টানঃ
হযরত ইস আঃ এর উম্মতদের কে বলা হয় খ্রিষ্টান।তিনি তার উম্মতদের এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের আহব্বান জানান কিন্তু উম্মতের কিছু লোক তাকে মারার ক্রোশবিদ্ব করে মারার পরিকল্পনা করলে ,আল্লহ তাকে আসমানে উঠিয়ে নেয়,এদিকে তার উম্মত্রা তার শিক্ষা ভুলে গিয়ে আল্লাহ সহ তিন স্রষ্টায় বিশ্বাস শুরু করে। আরবে ইহুদি খ্রিষ্টান দের মধ্যে সবসময় দ্বন্দ লেগেই থাকত।
*মুর্তিপূজারীঃ
ইহুদি খ্রিষ্টান ছাড়া আরবে আর ও একটি সম্পদ্রায় ছিল যারা হস্তনির্মিত মুর্তির পুজা করত।মক্কাবাসী সহ সমগ্র আরববাসী কাবাঘরকে পবিত্র মনে করত এখানে প্রায় সব জাতি এসে হজ্ব করত ,মুর্তপূজকরা ৩৬০ টি মুর্তি দ্বার কাবাঘর পুর্ন করে রেখেছিল।তাদের মধ্যে নবীদের মুর্তি ছিল ।আবার লাত, ওজ্জা মানত নামক মুর্তি ও ছিল।
*হানিফ সম্প্রদায়ঃ
যখন সমগ্র আরব অন্ধকারে আচ্ছন্ন ছিল তখন আরবে হানিফ সম্প্রদায় নামক এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসি কিছু লোক ছিল।পৌত্তলিক আরবে তারা হানিফ নামে পরিচিত ছিল।এদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ছিলঃ
·      ওরাকা বিন নাওফেল,
·      উমাইয়া বিন আবিস সালাত,
·      আওস বিন সাওদা,
·      কবি যুহাইর, প্রমুখ ব্যাক্তবর্গ।
 অর্থনৈতিক অবস্থাঃ
আরবের অধিকাংশ জায়গা মরুভুমি হওয়ায় তা কৃষিকাজে অনুপযোগি ছিল। সামান্য যে খাদ্যদ্রব্য  উতপন্য হত সে সম্পদ দ্বারা প্রয়োজন মিটানো প্রায় অসম্ভব ছিল, তাই আরবরা সমসময় জীবন সংগ্রামে ব্যাস্ত থাকত।
মরুভাসী বেদুইনরা ব্যবসা বানিজ্য ,শিল্প কারুকার্য অথবা চাষাভাস তাদের নিকট মর্যাদা হানিকর পেশা বলে মনে হত।এজন্য তারা পশুপালন,শিকার ও দস্যুবিত্ত কে প্রধান পেশা হিসাবে বেছে নেয়।
ততকালীন আরবে ৪ শ্রেনীর লোক ছিল।
১।গরিব যাযাবর।
২।কুসীদজীবি ইহুদি।
৩।কারিগর শ্রেনী।
৪।শহরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী মহল।
এছাড়াও আরবের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা  ছিল বিভিন্ন রকম নিম্নে তা তুলে ধরা হলোঃ
*মক্কা কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী।
*তায়েফ কেন্দ্রিক অর্থব্যবস্থা।
*ব্যাংকিং ব্যবস্থা।
*বিত্তশালী ব্যাবশায়ী শ্রেনী ইত্যাদির
পরবর্তী পর্ব
https://rasulsmerjiboni.blogspot.com/2020/01/blog-post.html
 রাসুল (সাঃ) এর পুর্নাংগ জীবনী জানতে আমাদের এই অ্যাপ্টি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করুন।
                https://play.google.com/store/apps/details?id=com.duappsmedia.mohanobi

Comments

Popular posts from this blog

রাসুল সাঃ এর জীবনী

রাসুল সাঃ এর জীবনী